Tuesday 4 December 2012

মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম ঈদ, সকল ঈদের সেরা ঈদ, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম :

মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম ঈদ, সকল ঈদের সেরা ঈদ, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাস রবীউল আউয়াল শরীফ। এ মুবারক মাসের ১২ তারিখ মুবারক দিনটি উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠতম ঈদ উদ্‌যাপনের দিন । কারণ, এ মুবারক দিনটি যদি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনের অন্তর্ভুক্ত না হতো তাহলে শবে ক্বদর, শবে বরাত, ঈদুল ফিত্‌র্, ঈদুল আযহা, জুমুয়া ইত্যাদি ফযীলতপূর্ণ কোন দিন-রাতেরই আগমন ঘটতো না। শুধু তাই নয়, কুরআন শরীফ নাযিল হতো না, দ্বীন ইসলাম আসতো না এবং কোন মু’মিন-মুসলমানের অস্তিত্বও থাকতো না। ফলে, শরীয়ত এ মুবারক দিনটিকে নির্ধারণ করেছে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ’ হিসেবে এবং এ ঈদ পালন করাকে ফরয সাব্যস্ত করেছে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন, কুরআন শরীফ দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন খুশী প্রকাশ করে।” (সূরা ইউনুস-৫৮)
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন সূরা কাওছার-এ ইরশাদ করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি।” ‘কাওছার’-এর অনেক অর্থ রয়েছে তার মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে খইরে কাছির। অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক সমস্ত ভাল উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ বিষয় ও জিনিসগুলো হাদিয়া করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ। 


তাই সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ইজমা হয়েছে যে, ‘রওজা শরীফ-এর যে মাটি মুবারক আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পা মুবারক স্পর্শ করে আছে, সে মাটি মুবারক-এর মর্যাদা লক্ষ-কোটি আরশে আযীম-এর চেয়েও বেশি।’(সুবহানাল্লাহ) আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাস্‌সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিছবত থাকার কারণে মাটি মুবারক-এর যদি এত মর্যাদা-মর্তবা হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাস্‌সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে তারিখে, যে দিবসে, যে মাসে যমীনে এসেছেন অর্থাৎ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এর কতটুকু মর্যাদা-মর্তবা রয়েছে সেটা খুব সহজেই অনুধাবনীয়। সেদিন সমস্ত ঈদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ঈদ। সমস্ত দিনের চেয়ে বেশি সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত দিন ও তারিখ। 


যারা আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ তথা আগমন উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করবে আল্লাহ পাক উনাদেরকে অফুরন্ত নিয়ামত দান করবেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বসমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত আলী কার্‌রামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুবহানাল্লাহ্)
মুসলিম বিশ্বে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন, যিনি হিজরী দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, “যখন কোনো মুসলমান নিজ বাড়িতে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে তখন সেই বাড়ির অধিবাসীগণের উপর থেকে আল্লাহ পাক অবশ্যই খাদ্যাভাব, মহামারি, অগ্নিকাণ্ড, ডুবে মরা, বালা-মুছীবত, হিংসা-বিদ্বেষ, কু-দৃষ্টি, চুরি ইত্যাদি উঠিয়ে নেন। যখন উক্ত ব্যক্তি মারা যান তখন আল্লাহ পাক উনার জন্য মুনকার-নকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর উনার অবস্থান হয় আল্লাহ পাক উনার সন্নিধানে সিদকের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা) 

“হযরত আবূ লুবাবাহ ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জুমুয়ার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালামকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে উনাকে ওফাত দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশ্‌তা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই যে জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম, উনার জন্য যদি শুক্রবারের মর্যাদা রোযার ঈদ ও কুরবানীর ঈদের চেয়ে বেশি হয় তাহলে যেই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি না করলে হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালামও সৃষ্টি হতেন না, আসমান-যমীন, লৌহ-কলম, জিন-ইনসান, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি কোনকিছুই সৃষ্টি হতো না, কোন বিশেষ সময়ও হতো না এবং ক্বিয়ামতও সংঘটিত হতো না; সেই হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন, বিছাল শরীফ-এর দিন সোমবার এবং ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এর ফযীলত যে শুক্রবারের চেয়ে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। তাই, এ দিনকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ বা সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বলা হয়েছে। 

আর যারা আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করবেনা তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম উনার সময় খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম দুয়া করেছিলেন, “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্‌তী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশী) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। আল্লাহ পাক বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশীর দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি সারা কায়েনাতের অপর কাউকে দিব না।” (সূরা মায়িদা-১১৪, ১১৫) 

হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম উনার উক্ত দুয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করেছিলেন। আর খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনটিকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর উম্মতদেরকে নিয়ে খুশীর দিনরূপে উদ্‌যাপন করেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, সামান্য খাদ্যসহ এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম এবং উনার উম্মতের জন্য খুশীর দিন হয়ে যায় এবং সে দিনটিকে খুশীর দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়, তাহলে যিনি সৃষ্টির মুল, যিনি সারা আলমের জন্য রহমত, যাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করা হতোনা; সেই আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্‌সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘বিলাদত শরীফ’-এর দিনটিকে কিরূপ খুশীর দিন হিসেবে উদ্‌যাপন করা উচিত এবং সেদিন যদি কেউ খুশী প্রকাশ না করে তাহলে সে কিরূপ কঠিন শাস্তির যোগ্য হবে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। 
 
 

No comments:

Post a Comment