সাহাবী আবূ সাইদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুলেপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, আমার বিদায়ের পর শেষ যামানায় আমার উম্মতের মধ্য হতে পূর্বের কোন দেশ থেকে একটি জামাআত তাবলীগ নামে বের হবে, তারা কুরআন শরীফ পাঠ করবে, তাদের কুরআন শরীফ পাঠ তোমাদের পাঠের তুলনায় খুবই সুন্দর হবে। কুরআন শরীফের প্রতি বাহ্যত তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা দেখে মনে হবে যেন ওরা কুরআন শরীফের জন্য কুরআন শরীফ ওদের জন্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওরা কুরআন শরীফের প্রতিটি আয়াতের উপরে ঈমান রাখবে না এবং কুরআন শরীফের কঠিন নির্দেশের উপর আমল করবে না।
এই জামা'আতের অধিকাংশ লোক হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। যেমন কুরআন শরীফের ও হাদীস শরীফের জ্ঞানে হবে মূর্খ তেমন সাধারণ জ্ঞানেও হবে মূর্খ। এই জামাআতে যদি কোন শিক্ষিত লোক যোগদান করে তাহলে তার আচরণ ও স্বভাব হয়ে যাবে জামাআতে যোগদানকারী অন্যান্য মূর্খের মত। মূর্খরা যেমন মূর্খতার আনুগত্য করবে তেমনি শিক্ষিত লোকটিও মূর্খদেরই আনুগত্য করবে। এই জামা'আতের বয়ান ও বক্তৃতায় থাকবে কেবল ফযিলাতের বয়ান। বিভিন্ন আমলে সর্বোচ্চ ফযিলাতের প্রমাণহীন বর্ণনাই হবে তাদের বয়ানের বিষয়বস্তু।
হে মুসলমানগণ ! ঐ জামা'আতের লোকদের নামায, রোযা অন্যান্য আমল এতই সুন্দর হবে যে, তোমরা তোমাদের নামায, রোযা ও আমল সমূহকে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে। এই জামা'আতের লোকেরা সাধারণ মানুষকে কুরআন শরীফের পথে তথা দ্বীনের পথে চলার নামে ডাকবে, কিন্তু তারা চলবে তাদের তৈরী করা পথে, ডাকলেও তারা কুরআনের পথে চলবে না।
তাদের ওয়াজ ও বয়ান হবে মধুর মত মিষ্টি, ব্যবহার হবে চিনির মত সুস্বাদু, তাদের ভাষা হবে সকল মিষ্টির চাইতে মিষ্টি। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ ধারণ-ধরণ হবে খুবই আকর্ষণীয়, যেমন সুন্দর হরিণ তার হরিণির পিছনে যেমন ছুটতে থাকে তেমন সাধারণ মানুষ তাদের মিষ্ট ব্যবহার, আমলের প্রদর্শনী ও সুমধুর ওয়াজ শুনে তাদের জামা'আতের দিকে ছুটতে থাকবে।
তাদের অন্তর হবে ব্যাঘ্রের মত হিংস্র। বাঘের অন্তরে যেমন কোন পশুর চিৎকার মমতা প্রকাশ করে না, তেমন কুরআন ও হাদীসের বাণী যতই মধুর হোক তাদের অন্তরে প্রবেশ করবে না। তাদের কথাবার্তা আমল আচরণ, বয়ান যেগুলি তারা তাদের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তার-ভিতরকার কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আমলগুলি বর্জন করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার জন্য যতবার কেউ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ প্রদর্শন করুক বাঘের অন্তরে যেমন মমতা প্রবেশ করে না তেমন তাদের অন্তরে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ প্রবেশ করবে না।
তাদের জামা'আতে প্রবেশ করার পর তাদের মিষ্টি ব্যবহারে মানুষ হবে মুগ্ধ, কিন্তু ঐ মনোমুগ্ধ ব্যবহারের পেছনে জীবন ধ্বংসকারী, ঈমান বিনষ্টকারী, ইসলামী মুল্যবোধ বিনষ্টকারী মারাত্মক বিষ বিরাজমান থাকবে। তাদের প্রশিক্ষন ধীরে ধীরে মানুষের অন্তর হতে মহান আল্লাহপাক ও রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি আনুগত্যের প্রেরণা শেষ করে দেবে এবং জামা'আতের আমীরদের আনুগত্যের প্রতি মরণপণ আকৃষ্ট করবে। আমীরগণ দেখতে হবে খাঁটি পরহেজগার দ্বীনদার ব্যক্তিদের মত, কিন্তু তার অন্তর হবে শয়তানের মত, কুরআন শরীফের ও সুন্নাহ শরীফের প্রতি বিদ্রোহী। আমীরগণ যা করে যাচ্ছে তার মধ্যে কুরআনশরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোন কাজ কখনো কেউ ধরিয়ে দিলে কোনক্রমেই তা পরিবর্তন করতে প্রস্তুত হবে না। অর্থাৎ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ উপস্থাপন করার পর তারা কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ দেখেও কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ বর্জন করে মুরব্বীদের কথা মানবে। কুরআন শরীফ হাদীস শরীফের প্রতি তাদের অনীহা এতই তীব্র হবে যে, তারা অর্থসহ কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ কখনই পড়বে না, পড়ানোও যাবে না।
এই জামা'আতটি ইসলামের তাবলীগ করার কথা যতই বলুক কুরআন শরীফ যত সুন্দরই পাঠ করুক, নামা রোযা যতই সুন্দর হোক, আমল যতই চমৎকার হোক, মূলতঃ ঐ জামা'আতটি ইসলাম হতে বহির্ভূত হবে।
সাহাবা ই কিরামগণ বললেন,ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ দলটি চিনবার সহজ উপায় কি হবে? আমাদিগকে জানিয়ে দিন।
রাসুলেপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এই ইসলাম বহির্ভূত জামা'আতটি চিনবার সহজ উপায় হল-
১) তারা যখন তালীমে বসবে, গোল হয়ে বসবে।
২) অল্প সময়ের মধ্যে এই জামা'আতের লোকসংখ্যা খুব বেশী হবে।
৩) এই জামা'আতের আমীর ও মুরব্বীদের মাথা নেড়া হবে। তারা মাথা কামিয়ে ফেলবে।
তীর মারলে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। ঐ তীর আর কখনও ধনুকের দিকে ফিরে আসে না, তেমন যারা এই জামা'আতে যোগদান করবে তারা কখনও আর দ্বীনের দিকে ফিরে আসবে না। অর্থাৎ এই জামা'আতকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ যত দেখানো হোক, যত চেষ্টাই করা হোক না কেন দলটি দ্বীনের পথে ফিরে আসবে না। এদের সাথে তোমাদের যেখানেই স্বাক্ষাত হোক, সংগ্রাম হবে তোমাদের অনিবার্য। এই সংগ্রাম যদি কখনও যুদ্ধে পরিণত হয় তাহলে তা থেকেও পিছ পা হবে না।
এই সংগ্রামে বা যুদ্ধে যারা মৃত্যুবরণ করবে, তাদেরকে যে পুরষ্কার আল্লাহ দান করবেন তা অন্য কোন নেক কাজে দান করবেন না।
(বুখারী, আরবী দিল্লীঃ ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২৪, ১১২৮, মুয়াত্তা ইমামা মালেক, আরবী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৮, আবূ দাউদ, আরবী দিল্লী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৬৫৬, তিরমিযী, মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৫৫, মুসলিম,মিশকাত, আরবী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪৬২)
হাদীস সমূহের বর্ণনাকারী হলেন আবূ সাঈদ খুদরী, আলী, আবূ হুরায়রা, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)। (দেখুন সহীহ আল বুখারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৬৪৪৯, ৬৪৫০, ৬৪৫২, ৭০৪১ (আ.প্র.), বাংলা অনুবাদ মুয়াত্তা মালেকঃ ই.ফা. ১ম খন্ড, হাঃ নং- ৫৭৮)