Wednesday 5 December 2012

ছাহিবুল কাওছার, ছাহিবুল মাহ্‌শার, ছাহিবুল মাক্বামিল মাহমূদ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মত মানুষ নন।

হযরত আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের কারো মত নই। (বুখারী ১/২৬৩ আবূ দাউদ/১৩৭)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনুরূপ নই। (বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৪)
হযরত আবূ সাঈদ খুদুরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি আকৃতিগতভাবে তোমাদের মত নই।” (বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৫)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে রয়েছে? (বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৭) অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে কেউই আমার মত নয়। বা আমি তোমাদের কারো মত নই। তাই জনৈক কবি বলেছেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাশার, তবে তিনি অন্যান্য বাশারের মত নন। যেরূপ ইয়াকুত পাথর অন্যান্য পাথরের মত নয়।”


বাহ্‌রুল উলুম হযরত মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল আলী লখনবী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি “মীর যাহিদ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত বিষয়েরই ইল্‌ম দান করেছেন, যা মহান আল্লাহ পাক-এর মহান কুদরতী কলম বা কলমে আ’লার আওতায়ও আসেনি। যা লাওহে; মাহ্‌ফুজও আয়ত্ব করতে পারেনি। কস্মিনকালেও সৃষ্টির শুরু থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত তাঁর মত কেউ পয়দা হয়নি, কেউ তাঁর সমকক্ষ হবে না। সমস্ত কায়িনাতে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।”
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো অনেক দূরের কথা, উনার পুত-পবিত্রা আহলিয়াগণ অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের শানেই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আহলিয়াগণ! আপনারা অন্যান্য মহিলাদের মত নন।” (সূরা আহযাব/৩২)


সুতরাং যেই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়া হওয়ার কারণে উনারা দুনিয়ার সকল মহিলাদের থেকে তুলনাহীন হলেন, সেই মহান ব্যক্তিত্ব যিনি একমাত্র আল্লাহ পাক-এর পরেই সমস্ত প্রকার শ্রেষ্ঠত্ব, ভালাই ও কল্যাণের একচ্ছত্র অধিকারী, তিনি আমাদের মত মানুষ হন কি করে? মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “(হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মত একজন বাশার, তবে আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়।” (সূরা কাহ্‌ফ/১১০)
এ আয়াতে কারিমা-এর প্রেক্ষিতে অনেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের মতই মানুষ বলে থাকে। (নাউজুবিল্লাহ)


প্রকৃতপক্ষে এটা সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ ও ভুল। কারণ আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার প্রতি ওহী নাযিল হয়। বরং আমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজের প্রতি ওহী নাযিলের দাবী করে, তবে সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। যেমন কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি সম্প্রদায়।
মূলতঃ উপরোক্ত আয়াত শরীফের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র আদম সন্তান হিসেবে ‘মেছাল বাশার’ বা মানুষের অনুরূপ। সেজন্যই বনী আদমকে আশরাফুল মাখলুকাত করা হয়েছে, অর্থাৎ আল্লাহ্‌ পাক মানুষকে আশরাফিয়াত দান করেছেন বা সৃষ্টির সেরা করেছেন। হাক্বীক্বত তিনি আমাদের মত মানুষ নন।


লক্ষ-কোটি দিক বা বিষয় রয়েছে, যার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্‌ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মত মানুষ নন, বরং তিনি “নূরে মুজাস্‌সাম” বা নূরের সৃষ্টি। হযরত আদম আলাইহিস্‌ সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত যে সকল পুতঃপবিত্র মহিলা ও পুরুষ আলাইহিমুস সালামগণের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছেন, তাঁদের সকলের মধ্যেই তিনি সরাসরি নূর আকারে স্থানান্তরিত হয়েছেন এবং সবশেষে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম-এর রেহেম শরীফ হতে নূর হিসেবেই যমীনে তাশরীফ এনেছেন। সে কারণে তাঁর শরীর মুবারকের কোন ছায়া ছিল না। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে যা কিছু ছিল, তা সবই ছিল পবিত্র থেকে পবিত্রতম। এমনকি তাঁর প্রস্রাব ও ইস্তিঞ্জা মুবারকও ছিল পাক ও পবিত্র। যা পান করার কারণে জাহান্নামী লোকের জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। তিনি যে হাযত পুরা করতেন তাও কোন মানুষ দেখতে পেত না। যমিন তা সাথে সাথেই গ্রাস করে ফেলত বা খেয়ে ফেলত। তাঁর শরীর মুবারকে কশ্মিনকালেও মশা-মাছি বসতো না।


উম্মতের জন্য চারটির বেশী বিবাহ করা হারাম। কিন্তু আল্লাহ পাক এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য তা ছিল না। তিনি স্বয়ং নিজেই শারে’ বা শরীয়ত প্রণেতা, তিনি যা করেছেন, বলেছেন ও সম্মতি দিয়েছেন তাই শরীয়ত। পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তা নয়। সাধারণ মানুষ পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে ডেকে থাকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেভাবে ডাকলে কুফরী হবে।


সাধারণ মানুষের কলেমা শরীফ হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসুলুল্লাহ’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পক্ষান্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কলেমা শরীফ হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইন্নি রসুলুল্লাহ’ যা সাধারণ মানুষ দাবী করলে কাফির হবে। সাধারণ মানুষের আহলিয়াকে তালাক দিলে বা স্বামী মারা গেলে আহলিয়াকে অন্য কেউ বিবাহ করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিদায়ের পরে হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে অন্য কোন মানুষের জন্য বিবাহ করার চিন্তা করাটাও হারাম! সাধারণ মানুষের মৃত্যূর পরে তার মীরাছ (পরিত্যাক্ত সম্পদ বণ্টন করতে হয়। কিন্তু আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্ষেত্রে সেরূপ নয়। কারণ তিনি হায়াতুন্‌নবী।
এমনিভাবে অসংখ্য, অগণিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা একমাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য খাছ। যা অন্য কোন মানুষ তো দূরের কথা অন্য কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্‌ সালামগণকেও দান করা হয়নি। কাজেই তিনি কোন দিক থেকেই আমাদের মত নন।


http://www.al-ihsan.net

No comments:

Post a Comment